১৯৭১ সালে গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র এবং সেক্যুলারিজমের ভিত্তিতে ইসলামি মৌলবাদী পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়েছিলো এই বাংলাদেশ। কথা ছিলো গণতন্ত্র এবং সেক্যুলাজিম প্রতিষ্ঠা করা, কিন্তুু দুঃখজনক হলেও সত্য যে এদেশে মৌলবাদীদের সংখ্যাই দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ধর্মীয়ও সংখ্যালঘু এবং ধর্মে অবিশ্বাসী সেক্যুলার মানুষরা হারাচ্ছে নিরাপত্তা – অধিকার, পড়ছে ঝুঁকিতে।
ইসলাম এদেশের সংখ্যাগুরু ধর্ম হওয়াতে যখন যে রাজনৈতিক দলই এদেশে ক্ষমতায় এসেছিলো তারা ইসলামের মৌলবাদকে বিভিন্ন পন্থায় পুঁজি করেছিলো এবং এখনও করে যাচ্ছে। গণতন্ত্রকে ইসলামের স্বার্থেই ব্যবহার করা হয়েছে। যেহেতু গণতন্ত্রে ভোটের রাজনীতি, তাই সংখ্যাগুরু ধর্ম বা মতাদর্শের মানুষকে হাতে রাখাই রাজনৈতিক নেতাদের কাজ। সেজন্য তারা মৌলবাদীদের সাথে শুধু সম্পর্কই স্থাপন করে না, তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সমাবেশে অর্থায়নও করে। মাদ্রাসার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যাপক হারে। দূর্নীতিবাজ নেতারা তাদের কালো টাকার বিশাল অংশ মাদ্রাসায় দান করে এই বিশ্বাস থেকে যে বাকি টাকাটা বৈধ হবে। তাছাড়া, মাদ্রাসা মসজিদে দান করার মাধ্যমে তারা সমাজে ধর্মান্ধদের মাঝে জনপ্রিয়তা লাভ করে। আর এই মাদ্রাসাগুলোই মৌলবাদ এবং জঙ্গিবাদের আঁতুড়ঘর। এখান থেকেই এসব ছড়ায় সমাজে অন্যান্য সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানুষদের মাঝে।
গণতন্ত্র যে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের মানবাধিকার এবং বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বলে সেক্ষেত্রে তাদের নেই কোন অগ্রগতি। উল্টো তারা ইসলামি ধর্মানুভূতির দোহাই দিয়ে মানুষের এবং বাকস্বাধীনতাকে হরণ করেই চলেছে।
এদিকে ইসলামি মৌলবাদীরা দিন দিন অনুভূতিপ্রবণ হচ্ছে। রাষ্ট্রকতৃক ধর্মানুভূতির চাষাবাদের কারণে দিন দিন অসহিষ্ণুতা এবং উগ্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের মধ্যে।
এর ফলে ভিন্ন মতাবলম্বীরা হারাচ্ছে ন্যূনতম বাকস্বাধীনতা এবং পড়ছে নিরাপত্তাহীনতায়। কিছু বললেই সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হচ্ছে হামলা, হতে হচ্ছে মামলার শিকার। অথচ এই মৌলবাদীরা বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে যা ইচ্ছে তা বলেই যাচ্ছে। সরাসরি নাস্তিক এবং সংখ্যালঘুদের হুমকি দিচ্ছে এবং ছড়াচ্ছে বিদ্বেষপূর্ণ মিথ্যাচার। এখানে পুলিশ প্রশাসন সবাই নিশ্চুপ। কিন্তুু যখনই কোন নাস্তিক বা সংখ্যালঘু তাদের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাদের উগ্রবাদী মতাদর্শের সমালোচনা করে ঠিক তখনই মুসলিমরা ধর্মানুভুতি আঘাতের অভিযোগ করে এবং হামলা মামলা চালায়।
ব্লাসফেমী আইনের ডিজিটাল ভার্সন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৮ এবং ৩১ ধারায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে মানবতাবাদী লেখক, একটিভিস্ট ব্লগার এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে। ফলে মৌলবাদীরা তাদের মতাদর্শ নির্বিঘ্নে প্রচার করে যাচ্ছে কিন্তুু তাদের বিরোধী কোন মতাদর্শ প্রচারের সুযোগ না থাকায় তাদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। এতে বৃদ্ধি পাচ্ছে সাম্প্রদায়িক হামলার পরিমাণ। সাম্প্রদায়িক হামলায় যেন রাজনৈতিক নেতা এবং মৌলবাদী ধর্মগুরুরা মিলেমিশে কাজ করে। মৌলবাদী ধর্মগুরুরা সাম্প্রদায়িক হামলার মাধ্যমে সংখ্যালঘু এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের সংখ্যা কমাতে চায়। অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতারা সংখ্যালঘুদের জমি দখল করতে চায়।
এমতবস্থায় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি আজ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে তা ভাবার বিষয়? দেশের সংবিধানের সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা এই চার মূলনীতির স্তম্ভগুলো আজ কোথায়??? এই চার মূল স্তম্ভগুলো আজ সাম্প্রদায়িকতার আঘাতে আঘাতে খসে-খসে পড়ছে। এবারের হিন্দু ধর্মালম্বীদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা অতীতের সকল বর্বরতা, নৃশংসতা ও সাম্প্রদায়িকতার রেকর্ডকে হার মানিয়েছে।
এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে অনতিবিলম্বে মৌলবাদকে তোষণ করা বন্ধ করা পূর্বক ধর্মানুভূতির চাষাবাদ করা বন্ধ করতে হবে। বিশেষ ধর্ম বা মতাদর্শের ধর্মানুভূতিকে রক্ষা করতে অন্যের মানবাধিকার হরণ করা বন্ধ করতে হবে। সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে, না হলে সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের এই দেশটি ইসলামিক মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হবে, যা কারোর জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না। পাশের দেশ ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তান ও তালেবানী রাষ্ট্র আফগানিস্তান তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।