Bangladesh

টানা বৃষ্টিতে সিলেট শহরের অর্ধশতাধিক এলাকায় জলাবদ্ধতা

দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। নগরের বিভিন্ন রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি আর দোকানে পানি জমে যাওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত অর্ধশতাধিক এলাকায় জলাবদ্ধতা আছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের উপশহর, মির্জাজাঙ্গাল, তালতলা, কাজলশাহ, শেখঘাট, বনকলাপাড়া, কালীঘাট, পীরমহল্লা, সেনপাড়া, আদিত্যপাড়া, কেওয়াপাড়া, পায়রা, দরগাগেট, চৌহাট্টা, মেজরটিলা প্যারাগন আবাসিক এলাকার রাস্তাঘাট ও বাসায় পানি ঢুকেছে। গোড়ালি থেকে হাঁটুসমান পানি জমেছে। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর ও নিচতলায় পানি জমেছে। ফলে রোগী, তাঁদের স্বজন ও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

মেজরটিলা প্যারাগন আবাসিক এলাকার বাসিন্দা কলেজশিক্ষক ফারুক আহমদ বলেন, টানা বৃষ্টি চলায় এখন নগরের অধিকাংশ এলাকার বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে। গত বছরের ভয়াবহ বন্যায়ও যেসব এলাকায় পানি ওঠেনি, এমন উঁচু এলাকায়ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের এলাকাটি এ রকমই একটি। এখানে অনেক বাসাবাড়িতে পানি ওঠার পাশাপাশি রাস্তাও ডুবেছে

কেওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রানা কুমার সিনহা আজ ভোর পাঁচটার দিকে বলেন, বৃষ্টির কারণে তাঁদের এলাকার রাস্তায় পানি জমেছে। তাঁর ঘরের বারান্দায় পানি চলে এসেছে। এভাবে আরও কিছুক্ষণ বৃষ্টি হলে তাঁর বাসার ভেতরে পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা আছে। আদিত্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা রবি কিরণ সিংহ বলেন, তাঁদের এলাকার রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে।

ভুক্তভোগী বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, প্রধানত তিনটি কারণে নগরে অল্প সময়ের বৃষ্টিতেই এখন জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এগুলো হচ্ছে নগরের ছড়াগুলোয় (প্রাকৃতিক খাল) অপরিকল্পিত উন্নয়নকাজ, অনেক ড্রেনের উন্নয়নকাজ ধীরগতিতে চলায় পানি চলাচলের স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ হয়ে পড়া এবং ছড়া-নর্দমার তলদেশে প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্যে ভরাট হয়ে থাকা। এর বাইরে শহরের বুক চিরে প্রবাহিত সুরমা নদীর নাব্যতা হারানোও জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ বলে তাঁরা মনে করেন।

যোগাযোগ করলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী কিম প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরও সিলেট নগর পানির নিচে তলিয়ে যায়। সে সময়ে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিকে দায়ী করা গেলেও এখন এক রাতের ভারী বৃষ্টিতে সিলেট নগরের অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন। এক বছরে পরিস্থিতির কোনো উন্নয়ন হয়নি। এ জন্য দায়ী খেয়ালখুশির উন্নয়ন। এ উন্নয়নে নগর সম্প্রসারণের নামে হাওর-বিল ভরাট করা, ছড়া রক্ষার অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে আজ শনিবার সকালে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করলেও সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান সাড়া দেননি। তবে সম্প্রতি তিনি প্রথম আলোকে জানান, নগরের বিভিন্ন এলাকায় নালা-নর্দমার উন্নয়নকাজ চলছে। এ ছাড়া খাল-ছড়াও খনন হচ্ছে। উন্নয়নকাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতার সমস্যা দূর হবে।

এদিকে সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মাহমুদুল হাসান সোহেল সকাল পৌনে আটটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে আজ শনিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫৭ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এটা অতিভারী বৃষ্টি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button