BangladeshPolitical

বাকশাল: শেখ মুজিবুর রহমান যে কারণে বিতর্কিত এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের যে পদক্ষেপ নিয়ে এখনও সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয়, সেটি হচ্ছে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।

এই শাসন ব্যবস্থা বাকশাল নামে পরিচিত।

দেশটির সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বহুদলীয় সংসদীয় সরকার পদ্ধতি বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারি।

কোন প্রেক্ষাপটে কেন শেখ মুজিব বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ২৬শে মার্চ ঢাকায় এক জনসভায় বাকশাল নিয়ে বক্তব্যে ঘুনেধরা সমাজ পাল্টানোর কথা বলেছিলেন।

কিন্তু এর প্রেক্ষাপট নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে।

বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা শেখ মুজিব যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের দায়িত্ব নেয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেই পরিস্থিতি তাঁকে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার পথে নিয়ে যায় বলে তারা মনে করেন।

শেখ মুজিবের জীবন ও রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খুরশিদা বেগম।

তিনি বলছিলেন, বাকশাল গঠনের পেছনে প্রতিকূল রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দেয়ার বিষয় যেমন ছিল, একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন ছিল বলে তিনি মনে করেন।

“যুদ্ধ-পরবর্তী অবস্থা যেটা ছিল, একেবারে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। আমাদের কলকারখানা সব নষ্ট বা ভেঙে গেছে। রাস্তাঘাট বা অবকাঠামো নাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ চলছে না। কোষাগার শূণ্য। এক কোটি মানুষ ফিরে এসেছে ভারত থেকে।”

“এই যে একটা অবস্থা, সেই সুযোগে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোও কিন্তু বসে থাকলো না। এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভাল ছিল না। এরকম একটা পরিস্থিতিতে দেশটাকে সামাল দিতে বঙ্গবন্ধু একপর্যায়ে এই বাকশাল গঠন করেছেন।”

বাকশাল গঠনের আগে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি এবং দায় কার?

বাকশাল তৈরির পটভূমি নিয়ে আলোচনায় বিশ্লেষকদের অনেকের কথায় সেই সময়কার নৈরাজ্যকর একটা পরিস্থিতির কথা উঠে আসে।

সেই পরিস্থিতির দায় কার, তা নিয়েও নানা আলোচনা রয়েছে।

লেখক ও গবেষক বদরুদ্দিন উমর বলেছেন, শেখ মুজিবের জন্য তাঁর দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দুর্নীতি একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অন্যদিকে দলের একটি অংশ বেরিয়ে যাওয়ার পর সরকার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছিল।”

তখন বিরোধীদের ওপর নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা নিয়েও পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে শেখ মুজিব সব ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে বাকশাল গঠন করেছিলেন বলে মি. উমর উল্লেখ করেছেন।

“ঐ সময় প্রশাসন থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ দল ইত্যাদির মধ্যে একটা ভাঙন তৈরি হয়েছিল। যে ভাঙনটা তথাকথিত আওয়ামী লীগের যে সংগঠন ছিল, সেটা দিয়ে সামাল দেয়া সম্ভব ছিল না।”

মি. উমর বলছেন, “সেখানে তাদের সহমতের দল সিপিবিসহ অন্যদের নিয়ে একটা সংগঠন করা দরকার ছিল এবং যেটা সামাল দিতে পারে। শেখ মুজিব তা মনে করেছিলেন। সেজন্যই তিনি বাকশাল করেছিলেন।”

আওয়ামী লীগের একটা অংশ বেরিয়ে গিয়ে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে জাসদ নামের দল গঠন করেছিল ১৯৭২ সালের অক্টোবরে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সর্বহারা বা চরমপন্থী কিছু বামদলের সশস্ত্র তৎপরতাও চলছিল।

আওয়ামী লীগের নেতারা সে সময়ের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির জন্য জাসদ এবং চরমপন্থী দলগুলোর ওপরই দায় চাপিয়ে থাকেন।

আওয়ামী লীগ নেতা নূহ আলম লেনিন বাকশাল প্রতিষ্ঠার সময় আওয়ামী লীগের মিত্র কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতিতে ছিলেন।

বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর রাষ্ট্রের সব ক্ষমতা দেয়া হয় শেখ মুজিবের কাছে

মি. লেনিন বলছেন, দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি এবং ‘৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ, সব মিলিয়ে ভয়াবহ সংকটের মুখে বাধ্য হয়ে বাকশাল গঠন করা হয়েছিল।

“একদিকে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে একটা অংশ জাসদ নামের দল করার পাশাপাশি গণবাহিনীও গঠন করলো তাদের সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে তথাকথিত বিপ্লবের চিন্তা থেকে।”

“অন্যদিকে আগে থেকেই অতিবাম বা চরমপন্থীরা যেমন সর্বহারা পার্টির মতো, তারা বিভিন্ন অঞ্চলে শ্রেনিশত্রু খতমের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলো। বিভিন্ন জায়গায় হত্যা, সন্ত্রাস, বাড়ি-ঘর লুট, দেশের সম্পদ লুট চললো।”

সেই পটভূমি তুলে ধরতে গিয়ে মি. লেনিন আরও বলেন, “তখনকার জাসদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে আক্রমণ চালায়। তখন সরকার নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার মতো উপক্রম হয়। এছাড়া ‘৭৪ সালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তখনই বঙ্গবন্ধু ভাবতে শুরু করেন যে, রাষ্ট্রীয়ভাবে একটা দল গঠন করে রাজনৈতিক ও সামাজিক সব শক্তিকে নিয়ে দেশ পুনর্গঠনের কাজটি করবেন।”

বিশ্লেষকদের অনেকে আবার পটভূমিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেন
তারা মনে করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর প্রত্যাশা অনুযায়ী গণতন্ত্রের সুফল মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়নি। সেকারণে রাজনীতি এবং অর্থনীতি সব দিক থেকেই বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলছিলেন, শেখ মুজিবের ক্ষমতা অল্প সময়ের মধ্যেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল।

“একটা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে দেশটা স্বাধীন হয়েছিল। এই যুদ্ধের সময় জনগণের মাঝে আশা আকাঙ্খা যেমন বেড়েছিল, সে রকম জনগণ এটাও বুঝেছিল যে, আবার দরকার হলে আমরা অস্ত্র ধরে সরকারকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবো। যেটা বামপন্থীরা করেছিল। তাঁর রেজিমকে চ্যালেঞ্জ করেছিল।”

“উনিতো গণতন্ত্র পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা করতে পারেন নাই। তার আগেইতো উনার রেজিমকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। এই বামরা এবং বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র, তারা সেটা করেছিল। সেজন্য এটা করা হয়েছিল। এটা আমার বিশ্লেষণ।”

উনিশশো চুয়াত্তর সালের ১৭ই মার্চ ঢাকার রমনা এলাকায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনসুর আলীর বাসভবন ঘেরাও করেছিল জাসদ। তখন সেখানে গোলাগুলি হয়েছিল এবং হতাহত হয়েছিল অনেক মানুষ।

এর আগে দু’বছর ধরে অনেক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে হত্যা, খাদ্য ও পাটের গুদামে আগুন, থানা লুটের মতো নাশকতা চলছিল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

আওয়ামী লীগের একজন বর্ষীয়ান নেতা ডা. এস এ মালেক বলছিলেন, সেই সময়ের পরিস্থিতি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সামাল দেয়া সম্ভব ছিল না।

“সেদিন ‌৭২-এর সংবিধান প্রণয়ন করে সংসদের নির্বাচন দিয়ে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার হলো। কিন্তু আমরা কি দেখলাম? একদিকে সংসদীয় অবাধ গণতন্ত্র অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি আক্রমণ। পাঁচজন সাংসদকে মেরে ফেলে দেয়া হলো। রেল লাইন তুলে ফেলা হলো। এবং স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি সেখানে তৎপর হলো।”

তিনি আরও বলেছেন, “এই পরিস্থিতিতে আমার মতে, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সংসদীয় গণতন্ত্র দিয়ে দেশ শাসন করা সম্ভব ছিল না। সেজন্য তিনি বাকশালের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যের কথা বললেন। তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়ে এগুতে চেয়েছিলেন।”

বাকশাল কোন বিপ্লব নাকি একনায়কতন্ত্র ছিল – এনিয়েই বিতর্ক
উনিশশো পচাত্তর সালের ৭ই জুন যখন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়, তখন বিলুপ্ত করা হয়েছিল আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দল।

রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে চারটি পত্রিকা রেখে বাকি সব পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।

বদরুদ্দিন উমর বলেছেন, বাকশাল ছিল একনায়কতন্ত্র, সেজন্য মানুষ তা গ্রহণ করেনি।

“বাকশাল গঠনের পরে দেশের ওপর ফ্যাসিস্ট জুলুম আরম্ভ হয়ে গিয়েছিল। সব দলকে বন্ধ করে দিয়ে, নিষিদ্ধ করে দিয়ে, সব খবরের কাগজ নিষিদ্ধ করে দিয়ে লোকজনকে ধরপাকড় করে ব্যাপকভাবে জুলুম করেছিলেন।”

মি. উমর মনে করেন, কৃষক-শ্রমিকের সাথে বাকশালের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

“এটা কি সহজ জিনিস নাকি সমস্ত সংবাদপত্র বন্ধ করে দিলাম। হাজার হাজার লোককে জেলে দিলাম। এটা কি খেলনা জিনিস? সেজন্যই লোকে মনে রাখে এবং সমালোচনা করে।”

তবে শেখ মুজিব বাকশালকে দ্বিতীয় বিপ্লব হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন।

ডা. এস এ মালেকের বক্তব্য হচ্ছে, গ্রামে গ্রামে বহুমুখী সমবায় প্রতিষ্ঠা করে মালিক তার জমি দেবেন এবং রাষ্ট্রের অর্থে ভূমিহীন কৃষক সেই জমিতে আবাদ করবেন। সেই উৎপাদিত ফসল তিন ভাগে ভাগ হবে। আর শিল্প কারখানা পরিচালনায় শ্রমিকের প্রতিনিধি রেখে তাদের অধিকার নিশ্চিত করা। এই দু’টি কর্মসূচিই ছিল বাকশালের অন্যতম প্রধান বিষয়।

ডা. মালেক উল্লেখ করেছেন, জেলায় জেলায় গভর্ণরের নেতৃত্বে কাউন্সিল গঠন করে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করার পদক্ষেপও নেয়া হয়েছিল।

“প্রথম কথা হচ্ছে, গণতন্ত্রের বিকেন্দ্রীকরণ। তিনি চেয়েছিলেন গণপ্রশাসন। সেজন্য তিনি নির্বাচিত প্রতিনিধি দিয়ে গভর্নরের নেতৃত্বে কাউন্সিল করেছিলেন। জেলায় জেলায় এই গভর্ণর কাউন্সিলে প্রশাসনসহ সর্বশ্রেনির লোককে রেখেছিলেন। সুতরাং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হবে।”

“দুই নম্বর হচ্ছে, বহুমুখী সমবায় সমিতি। যেখানে তিনি ভূমিহীনদের স্বার্থ রক্ষা করবেন। সুতরাং এই যে বলা হয় একদলীয় শাসন,এটা ঠিক নয়। মাওসেতুং বা লেনিনের মতোতো বিপ্লব ওভাবে হয়নি। এটা হয়েছে তিনি পিপলস ডেমোক্রেসি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।”

ডা. মালেক আরও বলেছেন, “তিনি স্পষ্ট বলেছিলেন, কোনো দেশের মন্ত্রটন্ত্র আমি আমদানি করবো না। পালার্মেন্টে যখন কেউ কেউ এর বিরুদ্ধে বক্তব্য করলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সেন্টিমেন্ট বুঝি। আই উইল গো ফর ফ্রেশ ম্যান্ডেট‌। আমি এটা সাময়িক সময়ের জন্য করছি এখনকার দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য। সবকিছু ঠিক হলে আমি আবার গণতন্ত্রে ফিরে আসবো।’ এটা তিনি বলেছিলেন।”

বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, ৬০ এবং ৭০-এর দশকে বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের বিস্তার ঘটেছিল এবং তার প্রভাব বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্ষেত্রেও ছিল। সেই প্রেক্ষাপটে সমাজতন্ত্রের ধারণা থেকে বাংলাদেশের বাস্তবতায় বাকশালের কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছিল তারা মনে করেন।

খুরশিদা বেগম বাকশালকে দেখেন শেখ মুজিবের দর্শন হিসাবে।

“এটি বঙ্গবন্ধুর দর্শন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। ঐ মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, সেটাকে একটা পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর দর্শনকে বাকশাল রুপে এনে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।”

বাকশাল নিয়ে সাধারণ মানুষের অসন্তুষ্টি
বাকশালকে কৃষক শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করা এবং সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি হিসাবে তুলে ধরেন এর সমর্থকরা।

কিন্তু সে সময় বাকশাল নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছিল এবং সেজন্য এর পক্ষে জনসমর্থন পায়নি বলে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলছিলেন, বাকশালের আদর্শের ভিত্তিতে এবং সাংগঠনিক কাঠামোতে দুর্বলতা ছিল।

“এটা মূলত আদর্শের ভিত্তিটা অত্যন্ত দুর্বল ছিল। কারণ বাকশালের মতো একটা ওয়ান পার্টি স্টেট করতে হলে সেই পার্টিটার গ্রাম গঞ্জ সর্বত্র একেবারে কমিউনিস্ট পার্টির মতো মানুষের মাঝে ঢুকে যেতে হয়।

“আদর্শের ভিত্তিটাকে একেবারে স্ট্রং করে নিয়ে আসতে হয় গ্রাসরুট লেভেল থেকে। সেই ভিত্তিটাতো ছিল না। সেজন্য জনগণের মধ্যে অসন্তুষ্টি দেখা দিয়েছিল।”

বাকশাল কী ভুল ছিল?
বাকশাল প্রতিষ্ঠা একটা ভুল পদক্ষেপ ছিল বলে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন।

তবে আওয়ামী লীগ বাকশালকে সেসময় জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির জন্য আদর্শ ভিত্তিক কর্মসূচি হিসাবে তুলে ধরে থাকে।

নূহ আলম লেনিন বলছিলেন, বাকশাল পুরোপুরি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ১৯৭৫ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে। তার আগেই পট পরিবর্তনের কারণে এর ভালমন্দ দেখার সুযোগ হয়নি বলে তিনি মনে করেন।

“এটা ভুল কি শুদ্ধ যদি বলেন,সেটা মূল্যায়ন করার সময়তো আমরা পেলাম না। এই নতুন সিস্টেম কার্যকর হওয়ার আগেইতো তাঁকে হত্যা করা হলো। সময়তো তিনি পাননি। কাজেই এটা সফল হয়েছে নাকি ব্যর্থ হয়েছে – এটা মূল্যায়ন করার সুযোগ কিন্তু আমরা পাইনি।”

বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বাকশালের সমর্থনে যুক্তি দিয়ে এর ইতিবাচক দিক তুলে ধরা হয়।

তবে আওয়ামী লীগ ১৯৭৫ সালের সেই জানুয়ারির পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে পারে, দলটির নেতাদের এমন কথা বলতে শোনা যায় না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button